এম সি এর মৌলিক আক্বীদা এই সংগঠনের সংবিধানে বর্ণিত আছে। আর তা হচ্ছে কালিমা তাইয়েবা ঃ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ “আলাহ্ ব্যতীত কোন মাবুদ নেই, হযরত মুহাম্মদ (সা) তাঁর বান্দা ও রাসূল”। কালেমা তাইয়্যেবা ইসলামের মূল ঘোষণা। এই কালেমার স্বীকৃতি ছাড়া কোন মানুষই ইসলামের সীমার মধ্যে প্রবেশ করতে পারেনা। বীজ বপন না করলে যেমনি গাছ হয়না তেমনিভাবে এই কালেমার মর্মকথা ভালভাবে উপলবিদ্ধ করতে না পারলে মানুষের জীবন ক্ষেত্রে ইসলামের গাছ জন্মাতে পারেনা। বীজ খারাপ হলে যেমন গাছ অংকুরিত হয়না তেমনি এই কালেমা ভালভাবে না বুঝে কবুল করলে বা এই কালেমার ভুল অর্থ গ্রহণ করলে ইসলামের হুকুম সঠিকভাবে পালণ করা সম্ভব হয়না।
কালেমার দুইটি অংশ। প্রথম অংশ “লাইলাহা ইলালাহ” এবং দ্বিতীয় অংশ “মুহাম্মাদুর রাসূলুলাহ”। প্রথম অংশের অর্থ আলাহ ছাড়া কেউ মাবুদ নাই যার গোলামী করা যায়, তিনি সারা জাহানের ও আমাদের মলিক এবং জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাঁরই আইন মানতে হবে; আনুগত্য করতে হবে। আর দ্বিতীয় অংশের অর্থ মুহাম্মদ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আলাহর রাসূল। আলাহ তাঁকে সর্বশেষ নবী ও রাসূল হিসাবে সমগ্র সৃষ্টিজগতের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছেন। তিনি ইসলামের প্রচার ও মানবজাতির পথ প্রদর্শকরূপে আবির্ভুত হয়েছেন।
মূলত উপরিউক্ত আহবানই তাওহীদের মূল কথা। তাওহীদ বা আলাহর একত্বের এই আহবান নতুন নয়; দুনিয়াতে যত নবী ও রাসূল এসেছেন প্রত্যেকে নিক নিজ উম্মতকে এক আলাহর স্বীকৃতি তথা বিশুদ্ধ তাওহীদের প্রতিই আহবান জানিয়েছেন। তাঁদের সকলের আহবানের মূল কথা কুরআনে এভাবে এসেছে:
وَإِلَهُكُمْ إِلَهٌ وَاحِدٌ لاَّ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الرَّحْمَنُ الرَّحِيمُ
“তোমাদের ইলাহ একই ইলাহ। ঐ রাহমান ও রাহীম ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই” (বাকারা ঃ ১৬৩)। একমাত্র আলাহর ইবাদত ও দাসত্বই যে সকল নবী রাসূলের দাওয়াতের মূল লক্ষ্য ছিল এই কথার দিকে ইংগিত দিয়ে আলাহ বলেন:
وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ
“হে নবী! আমি আপনার আগে যে রাসূলই পাঠিয়েছি তাকেও এই আদেশই করেছি যে, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা শুধু আমারই দাসত্ব করো” (আম্বিয়া ঃ ২৫(। এই আয়াত থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে, সকল নবী ও রাসূল এক আলাহর দাসত্বের প্রতি আহবান নিয়ে দুনিয়াতে আগমন করেছেন এবং আলাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা ও আনুগত্য করা থেকে বিরত থাকার অহবান জানিয়েছেন।
আলাহর পক্ষ থেকে কিতাব প্রাপ্ত সব নবী ও রাসুলের অধহবানের মূল কথা একই। এই প্রসংগে আলাহ তায়ালা বলেন,
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ تَعَالَوْاْ إِلَى كَلَمَةٍ سَوَاء بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمْ أَلاَّ نَعْبُدَ إِلاَّ اللّهَ وَلاَ نُشْرِكَ بِهِ شَيْئًا وَلاَ يَتَّخِذَ بَعْضُنَا بَعْضاً أَرْبَابًا مِّن دُونِ اللّهِ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَقُولُواْ اشْهَدُواْ بِأَنَّا مُسْلِمُونَ
“হে নবী! আপনি বলুন ঃ হে আহলে কিতাব! এমন একটি কথার দিকে আসো, যা তোমাদের ও আমাদের মধ্যে একই রকম। তা এই যে, আমরা আলাহ ছাড়া আর কারো দাসত্ব করবো না, তার সাথে আর কাউকে শরীক করবো না এবং আমাদের মধ্যে কেউ যেন আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে নিজেরদের রব না বানায়। যদি তারা এ দাওয়াত কবুল করা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাহলে স্পষ্ট বলে দিন- তোমরা সাক্ষী থাকো, আমরা তো মুসলিমই আছি (শুধু আলাহর দাসত্ব ও আনুগত্য করছি)” (আলে ইমরান ঃ ৬৪)।
কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় একথা বারবার উচ্চারিত হয়েছে যে,
فَتَعَالَى اللَّهُ الْمَلِكُ الْحَقُّ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْكَرِيمِ (১১৬)
“আলাহই মহান এবং আসল বাদশাহ। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। তিনিই মহান আরশের রব।” (মুমীনূন ঃ ১১৬)।
আলোচনা থেকে এই কথা সকলের কাছে পরিষ্কার যে আমাদের ইবাদত বন্দেগী কবুল হওয়ার জন্য আলাহর প্রতি সঠিক ও বিশুদ্ধ ঈমান পোষণ করা দরকার। কুফর ও শিরক মিশ্রিত ঈমান নেক আমল বরবাদ করে দেয়। অজু ছাড়া যেমন নামায শুদ্ধ হয়না তেমনি বিশুদ্ধ ঈমান ছাড়া আমল গ্রহণযোগ্য হয়না। এই প্রসঙ্গে আলাহ বলেন,
َلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ – بَلِ اللَّهَ فَاعْبُدْ وَكُن مِّنْ الشَّاكِرِينَ
“এ কথা তাদেরকে আপনার সাফ সাফ বলে দেওয়াই দরকার। কারণ আপনার কাছেও আপনার আগে যারা গত হয়ে গেছেন তাদের কাছেও ওহী পাঠানো হয়েছে যে, যদি তুমি শিরক করো তাহলে তোমরা সকল আমল বরবাদ হয়ে যাবে এবং তোমরা ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে শামিল হবে। সুতরাং (হে নবী!) আপনি শুধু আলাহরই দাসত্ব করুন এবং শোকরকারী বান্দাহদের মধ্যে হয়ে যান।” (যুমার ঃ ৬৫-৬৬)।
লেমা তাইয়্যেবায় ঘোষিত বিশ্বাসের সার কথা হচ্ছে:
১. আলাহ ছাড়া আর কাহাকেও সাহায্যকারী, পৃষ্ঠপোষক, কার্য-সম্পাদনকারী, প্রয়োজন পূরণকারী, বিপদ দূরকারী, ফরিয়াদ শ্রবণকারী ও গ্রহণকারী, বিপদ হতে উদ্ধারকারী ও মুক্তিদাতা বলে স্বীকার ও বিশ্বাস না করা।
২. আলাহ ছাড়া কেউ ক্ষতি- উপকার করতে পারে বলে মনে না করা এবং সকল ব্যাপারে একমাত্র আলাহর উপর ভরসা করা।
৩. আলাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে দোয়া ও সাহায্যের প্রার্থনা না করা
৪. আলাহ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত বন্দেগী না করা এবং কারো নামে মান্নত না করা।
৫. আলাহ ছাড়া অন্য কাহাকেও সার্বভৌম ক্ষমতার অধিকারী বলে স্বীকার না করা।
৬. আলাহ ছাড়া অন্য কারো দাস হয়ে না থাকা এবং নিজের নফসের খাহেস অন্ধভাবে অনুসরণ না করা।
৭. জীবনের প্রত্যেক কাজের জবাবদিহী একমাত্র আলাহর কাছে করতে হবে এই বিশ্বাস মনে রেখে যে কাজে আলাহ খুশী হন তা করা এবং যে কাজে অসন্তুষ্ট হন তা থেকে বিরত থাকা।
মুহাম্মাদুর রাসূলুলাহ কালেমার এই শেষ অংশ স্বীকার করার অর্থ হচ্ছে :
১. হযরত মুহাম্মদ সালালাহু আলাইহি ওয়াসালাম আলাহর সর্বশেষ নবী ও রাসূল বলে মনে প্রাণে মেনে নেয়া। তাঁর পর আর কোন নবী আসতে পারে বলে বিশ্বাস করা মারাত্মক কুফরী। আলাহর রাসূল শেষ নবী ও আল-কুরআন শেষ কিতাব। কুরআনের শিক্ষা কিয়ামত পর্যন্ত জারী থাকবে।
২. রাসূলে কারীম (সা) সমগ্র সৃষ্টি জগতের জন্য রহমত। তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য আশীর্বাদ নন; গোটা মানব সমাজ ও সৃষ্টি জগতের জন্য আশীর্বাদ।
৩. আলাহর রাসূল ছাড়া অন্য কাউকে নির্ভুল মনে না করা; কেননা যার উপর অহী নাযিল হয়না সে নির্ভূল হতে পারেননা।
৪. আলাহর রাসূলের মাধ্যমে যে জীবন বিধান ও হিদায়েত আলাহর তরফ হতে এসেছে এট সত্য এবং শাশ্বত বলে মেনে নেয়া এবং তাঁর ফায়সালা, নির্দেশ শিক্ষা ও উপদেশ বুঝে না আসলেও অন্ধভাবে মেনে নেয়া।
৫. একমাত্র আলাহর রাসূলকেই অনুকরণযোগ্য শ্রেষ্ঠ আদর্শ মেনে নেয়া এবং তাঁর উপস্থাপতি আদর্শ ও প্রদত্ত শিক্ষার বিরোধী সবই ভুল ও পরিত্যাজ্য।
৬. আলাহর মহব্বত, নৈকট্য ও সন্তুষ্টিলাভের জন্য রাসূলে কারীম সাহাবায়ে কেরামকে যেসব তরীকা শিক্ষা তিয়েছেন একমাত্র তাই অনুসরণ করা। এছাড়া ভিন্ন কোন তরীকা অনুসরন না করা।
৭. রাসূলে কারীম সাললাহু আলাইহি ওয়াসালামের পুরো জীবন আমাদের জন্য মডেল। মানব জীবনের প্রতিটি দিক ও বিভাগে আলাহর রাসূলের আদর্শ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ন্যায় ও ইনসাফ পূর্ণ সমাজ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব বলে বিশ্বাস করা এবং রাসূলের জীবন চরিতকে কুরআনের বাস্তব ব্যাখ্যা এবং উহাকেই সকল ব্যাপাওে সত্যেও মাপকাঠি হিসাবে মেনে নেয়া।