দায়ীর বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অনেক বিষয় কুরআন ও হাদীসে আলোচিত হয়েছে। যার সার কথা হচ্ছে:
১. আল্লাহ র পথে আহবানকারীর ভাষা হবে মধুর ও চিত্তাকর্ষক। যেমন আল্লাহ সূরা আল ইনফিতারে বলছেন, ’’ তোমাদেরকে কোন জিনিস সমূহ তোমাদের রবের ব্যাপারে ভূলিয়ে রেখেছে?
২. দরদভরা মন নিয়েই তিনি দাওয়াত প্রদান করবেন। যেমন হযরত ইবরাহীম (আ) তাঁর পিতাকে দরদভরা মন নিয়েই বলেছিলেন , ’’ হে আমার পিতা? কেন এমন বস্তুও উপাসনা করছেন যা কারো উপকার কিংবা অপকার কিছুই করতে পারেনা।
৩. সমালোচনা মুলক বক্তব্য পরিহার করে ’’ বিশ্বস্ত উপদেশকারীর মত উপদেশ প্রদান করবেন। এই কারণে কুরআনে নাসেহ আমিন শব্দ প্রয়োগ করা হয়েছে। যেমন ইফসুফ ( আ) বলেছিলেন , ’’ তোমরাই বল । এক খোদা ভাল না বহু খোদা?
৪. কটাক্ষ এর উত্তম জবাব প্রদান। সূরা নাহল এর ১২৫ নম্বর আয়াতে এই বিষয়েই নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
৫. ভাষা সহজ অথচ সংক্ষিপ্ত পেঁচালো না হওয়া- ইউসুফ কারাগারে কতটুকু সময় নিবেন তা বলে দিয়েছেন।
৬. দ্বীনের একদিক নয় পুর্ণাংগ দ্বীনের দাওয়াত
৭. আদর্শের মুর্ত প্রতীক হওয়ার চেষ্টা করা-আল্লাহ র সাথে গভীর সম্পর্ক সৃষ্টিতে তুপর থাকা
৮. মনোবিজ্ঞানীর মত ভূমিকা পালণ করা
৯. ক্ষমা উদারতা মহত্ব প্রদর্শন করা
১০. হাস্যোজ্জল চেহারার অধিকারী হওয়া
১১. ইখলাস এর সাথে কাজ করা
এক কথায় দায়ীর ভূমিকা পালনরত ভাই/বোনকে বিশেষ বৈশিষ্টের অধিকারী হতে হবে। কম কথাব বলা, ধৈর্যের পরিচয় দেয়া, সর্বোপরি চরিত্রের মাধুর্য দিয়ে দায়ী তার প্রভাব সৃষ্টি করবেন। তিনি ইসলাম সম্পর্কে সঠিক ও স্পষ্ট ধারণা রাখবেন। যার সাথে সাক্ষাত করাহচ্ছে তার মন মানসিকতার প্রতি খেয়াল রাখবেন। ব্যবহারে সতর্ক ও অমায়িক হবেন।
সুখ-দু”খের অংশীদার হবেন। সম্পর্ক গভীর করার নিয়তে একসঙ্গে নাস্তা, খাওয়া, ভ্রমণ,নিজ বাসায় নিয়ে আসা, তার বাসায় যাওয়া, উপহার দেয়া ইত্যাদি উপায় অবলম্বন করবেন। দাওয়াতী কাজের ক্ষেত্রে লক্ষ্যনীয় কয়েকটি বিষয় হচ্ছে:
১. আকর্ষনীয় সুত্রপাত করা। আকর্ষনীয় ভাষায় কথা বলা।
২. এক কথা বারবার বলে তিক্ত না করা।
৩. সহযোগীদের সাথে মধুর সম্পর্ক বজায় রাখা।
৪. সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির গুণের সমাদর করা যেমন লেখক হলে লেখা পড়ে তার উপর বস্তুনিষ্ট মতামত দেয়া।
৫. বিভিন্ন ভাষা জ্ঞান থাকা। রাসুলে কারিম (স) কয়েকজন সাহবাদীরকে বিভিন্ন ভাষা শেখার কথা বলেছেন।
একটি কথা সকলের কাছে পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন যে অতীতে কখনও সকল মানুষ দাওয়াত কবুল করেনি। দাওয়াতের প্রথম পর্যায়ে নিযাতন নিপীড়ন চলেছে এবং মুষ্টিমেয় মানুষ দাওয়াত কবুল করেছে। অধিকাংশ মানুষই দাওয়াত অস্বীকার করেছে। আল্লাহর রাসুলের দাওয়াতের জবাবে বলা হয়েছে, ‘’তোমার কথায় আমরা আমাদের দেবদেবীদেরকে ছাড়তে রাজী নই এবং তোমার কথা আমরা মানতে প্রস্তুত নই ‘’ হুদ ৯। এখানে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন যে, দাওয়াতের প্রথম পর্যায়ে যোগ্যতা সম্পন্ন লোকের আগমন ঘটেছে বেশী। খোলাফায়ে রাশেদীনের সকলেই মক্কী যুগেই ইসলাম কবুল করেন। এই কথা ঠিক যে, মক্কী যুগে অল্প সংখ্যক মানুষ ইসলাম কবুল করলেও তারা হকের উপর অটল ও অবিচল ছিলেন। আর তাঁরা মদীনায় হিযরাত করার পর দলে দলে লোক ইসলামে প্রবেশ করেন। সে সময় তারা প্রতিশোধ প্রবন হন নাই। বরং অতীতে যারা বাড়াবাড়ি করেছে তাদেরকে ক্ষমা সুন্দও দৃষ্টিতে দেখেন। এখানে আরেকটি বিষয় পরিষ্কার থাকা প্রয়োজন যে, মদীনায় যাওয়ার পরই সুযোগ সন্ধানী তথা মুনাফিকদের অনুপ্রবেশ ঘটে। কেননা বিজয়ের পরিবেশ দেখলেই সুযোগ সন্ধানীরা আগমন করে। কিন্তু আল্লাহ পাক মাঝে মধ্যে সাময়িক বপর্যয় দান করে এই ধরনের সুযোগ সন্ধানীদের চরিত্র উন্মোচন করেন।
এখানে আরেকটি বিষয তুলে ধরা প্রওয়াজন যে, দাওয়াত দানকারী অতীতে অনেক কটুক্তি ও টিপ্পনী শুনতে হয়েছে। আল্লাহর রাসুলকেও পাগল, গনক, যাদুকর, মিথ্যাবাদী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। শেয়াবে আবু তালেবে বন্দী রাখা হয়েছে। চলার পথে কাটা বিছিয়ে রাখা হয়েছিল। ঘাড়ে উটের নাড়ি ভ–ড়ি চেপে রাখা হতো। তাফেফে প্রস্তারাঘাগে রক্তাক্ত করা হয়েছে। এইভাবে নানা উপায়ে তাঁর ক্ষতি করার চেষ্টা করা হয়েছে এবং অবশেষে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল। অন্যান্য নবী-রাসুলদেরকে টিপ্পনী করা হয়েছে। তারা যখন দাওয়াত দিতো কানে কাপড় ঢুকিয়ে রাখতো। হযরত ইউসুফকে জেল খানায় দেয়া হয়েছে। হযরত মুসা দেশ থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। হযরত ইবরাহীমকে আগুণে নিক্ষেপ করা হয়েছে। হযরত ঈসাকে শুলিবিদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। হযরত যাকারিয়াকে করাত দিয়ে দ্বিখন্ডিত করা হয়েছে। বনী ইসরাঈলের অনেক নবী- রাসুলকে হত্যা করা হয়েছে। হযরত নুহকে হুমকি দেয়া হয়েছে , ‘’ যদি এখনও ক্ষান্ত না হও তাহলে পাথর মেরে মেরে ফেলবো’’ শুয়ারা ১১৬। এইভাবে একদিকে নির্যাতন করা হয়েছে এবং অপরদিকে নানা ধরনের লোভ লালসা দেয়া হয়েছে। সকল লোভ-লালসার উর্ধে উঠে আল্লাহর রাসুল (সা) ঘোষনা করেছিলেন, ‘’ আমার এক হাতে যদি চাঁদ আর আরেক হাতে সূর্য এনে দেয়া হয় তার পরও আমি সত্য থেকে বিচ্যুত হবনা’’।