Lesson 5 of 10
In Progress

সময়ের গুরুত্ব

hasan.zaman জুন ১৮, ২০২৫

সময় ব্যবস্থাপনা বা পরিকল্পনামাফিক এর সুষ্ঠু ব্যবহার সম্পর্কে ছোটবেলাতেই আমাদের শেখানো হয়। কিন্তু এটি ঠিক কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা আমরা অনুধাবন করতে পারি না। সময় ব্যবস্থাপনা হাতে থাকা গুরুত্বপূর্ণ কাজ শেষ করার ক্ষেত্রে পরিকল্পনামাফিক সময়ের যথাযথ ব্যবহার। আর এ বিষয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বা কর্মস্থলে অবশ্যই মেনে চলতে হয়। কিন্তু শুধু এক্ষেত্রেই নয়, জীবনের পথ চলার অনেক ক্ষেত্রে সময় ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন। এ ব্যবস্থাপনা আপাতদৃষ্টিতে মেনে চলা খুব সহজ মনে হলেও আসলে তা নয়। সুষ্ঠু সময় ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে আপনি আরো বেশি কাজ সাফল্যের সঙ্গে শেষ করতে পারবেন। যদি আপনি কর্মস্থলে সময় ব্যবস্থাপনার ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনার সময় তো বাঁচবেই, আপনি খুব অল্প সময়ে গুণগত মানসম্পন্ন কাজও করতে পারবেন। শুধু তাই নয়, এতে আপনার কাজের উৎকর্ষও বাড়বে। ফলে আপনার ও প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বাড়বে। অন্যদিকে সঠিক সময় ব্যবস্থাপনা না জানলে শুধু কর্মক্ষেত্র নয়, আপনার পারিবারিক ও ব্যক্তিজীবনেও যে এর বিরূপ প্রভাব পড়বে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মানুষের জীবনে সময়জ্ঞান জরুরি। সময়মতো মিটিং, ক্লাস, কর্মক্ষেত্র ইত্যাদিতে উপস্থিত হতে না পারলে শ্রমের ফলপ্রসূতা কমে যায়। যানজটের দেশ, তার ওপর দুর্ঘটনা, ঝুঁকি-ঝামেলার অন্ত নেই। তাই অনাহূত বিপদে বিলম্ব হতে পারে, সে হিসাব পথে নামার আগেই থাকতে হবে। সমাজ, সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক অনুধাবন জরুরি। তাই পড়াশোনা বাড়াতে হবে। যে-কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলার সামর্থ্য থাকতে হবে। ব্যক্তির সময়-চেতনার ওপর ভিত্তি করেই গোটা সমাজের সময়-সংস্কৃতি গড়ে ওঠে। নিয়মানুবর্তিতার বিষয়গুলো নিয়ে ছোটবেলা থেকে আমাদের শেখানো-পড়ানো হয়ে থাকে। কিন্তু বাস্তব ক্ষেত্রে আমরা সবাই তা পালন করি না। আমাদের জাগ্রত দশার প্রায় প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানোর ওপর ব্যক্তিগত উন্নতি যেমন নির্ভর করে, তেমনি মানুষের সার্বিক বিকাশেও এর প্রভাব পড়ে। তাই প্রতিটি মুহূর্ত কাজে লাগানো উচিত। ধরুন, আপনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত গাড়িতে বসে আছেন। আর গাড়ি আটকা পড়েছে জ্যামে। এই ফাঁকেও নিজের টুকিটাকি কাজগুলো সেরে নেয়া যেতে পারে। ব্যক্তিগত, পারিবারিক অথবা ব্যবসায়িকভাবে প্রয়োজনীয় ফোনগুলো করতে পারেন এ-সময়। অথবা কাজের চাপে, ক্লান্ত হয়ে থাকলে এই ফাঁকে রিল্যাক্স করুন। চোখ বন্ধ করে ফেলুন। হেডফোন লাগিয়ে দু-চারটা পছন্দের গান শুনতে পারেন। কাজগুলো যতো সুশৃঙ্খলভাবে করা যাবে, ততোই সময় বাঁচবে। সে সময় দিতে পারবেন নিজেকে, নিজের পরিবারকে। অহেতুক ছুটি কাটিয়ে বসে থাকলে জরুরি সময়ে ছুটি মিলবে না। এখন ইন্টারনেট-নির্ভরতা বেড়েছে। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মানুষ অনেক সময় দিচ্ছে। অনেকেরই তা আসক্তির পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। মন:সংযোগ ও আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে এসবে সময়ক্ষেপণ কমিয়ে আনা সম্ভব। অনেকেই নি:সঙ্গতায় ভোগেন। ফেসবুক, টিভি সিরিয়াল, দীর্ঘক্ষণ মোবাইলে কথা বলা ইত্যাদি তাদের জন্য সময় কাটানোর মাধ্যম।
সময়ের গন্ডিতে বাঁধা আমাদের জীবন, চলমান সময়ের প্রত্যেক সেকেন্ড-মিনিট-ঘণ্টা আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। সফল জীবন রচনায় প্রয়োজন সঠিক সময় ব্যবস্থাপনার। জীবনকে অর্থবহ, সমৃদ্ধ ও সুখস্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন সময় সচেতন ও পরিকল্পিত জীবনযাপনে অভ্যস্ত হওয়া। আল্লাহতায়ালা মহাগ্রন্থ আল কুরআনের বিভিন্ন জায়গায় সময়ের কথা উল্লেখ করে বিভিন্ন বিষয় স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। তিনি সূরা আল আসরে বলেছেন : ‘সময়ের কসম। মানুষ আসলে বড়ই ক্ষতির মধ্যে রয়েছে। তবে তারা ছাড়া যারা ঈমান এনেছে ও সৎকাজ করতে থেকেছে, একজন অন্যজনকে হক কথার ও সবর করার উপদেশ দিয়েছে।’
সময় হচ্ছে এমন একটি সম্পদ যা একবার হাতছাড়া হয়ে গেলে আর ফিরে আসে না। স্মরণ রাখতে হবে, আমরা অনেক কিছুই করতে পারব, কিন্তু সময়কে টেনে লম্বা করতে পারব না। যারা কাজের মধ্য দিয়ে সময় কাটায়, তারা সর্বদা আনন্দের মধ্যে থাকে। যারা অলস বসে থাকে তারা নানা দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার শিকার হয়। সময় এমন একটি বন্ধু, যা নিমেষে নিমেষে রূপ বদলায় এবং চমৎকার সব উপহার-উপঢৌকন তুলে দেয় আমাদের হাতে। আর যদি আমরা তাকে অবজ্ঞা করি তাহলে সে যাবতীয় উপহার-উপঢৌকনসহ চুপিসারে চলে যায় আমাদের কাছ থেকে। আমাদের দেশে সময়ের অপব্যবহার তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি। আমরা যদি সময়ানুবর্তী না হই দেশ আগাবে না, সময় নষ্ট করা জাতীয় কৃষ্টি হিসেবে গড়ে উঠবে।
আমরা যদি সময়কে যথাযথভাবে ব্যবহার করতে পারি তাহলে আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে জ্ঞানচর্চা, দেশসেবা, সমাজসেবা, মানবতার জন্য, নিজের ধর্ম ও আদর্শের জন্য কাজ করা। আর রাষ্ট্রেরও সময় ব্যবস্থাপনার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে। সুধী পাঠকদের হংকংয়ের একটি রাষ্ট্রীয় সময় ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত দিতে চাই, তা হলোÑহংকং একটি সড়ক নির্মাণ করতে গিয়ে দেখল যে যদি পাহাড়ের পাশ দিয়ে রাস্তা নিয়ে যাওয়া হয়, তাহলে পাঁচ সেকেন্ড সময় বেশি লাগবে আর যদি পাহাড় কেটে ভেতর দিয়ে রাস্তা নেয়া হয় তাহলে পাঁচ সেকেন্ড সময় কম লাগবে। কিন্তু পাহাড় কেটে রাস্তা করতে রাষ্ট্রের ব্যয় হবে ১০০ কোটি টাকা। হংকং রাষ্ট্রীয় পাঁচ সেকেন্ড সময় বাঁচানোর জন্য ১০০ কোটি টাকা খরচ করার সিদ্ধান্ত নিয়ে রাষ্ট্রীয় সুষ্ঠু সময় ব্যবস্থাপনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ ও কর্মক্ষেত্রে, মেধা ও জাতীয় জীবনে সময়ের গুরুত্ব কম দেই বলেই আজো আমরা দরিদ্র ও অনুন্নত জাতি। আমরা অনেক সময় দেখতে পাই উচ্চপদের কর্মকর্তা, এমনকি সাধারণ কর্মী প্রায় ১ ঘণ্টা দেরিতে অনুষ্ঠানে বা কর্মস্থলে পৌঁছে। সময় ব্যবস্থাপনার জ্ঞান, কৌশল সচেতনতা সৃষ্টি হলে অবশ্যই আমাদের জীবনের সব ক্ষেত্রে অগ্রগতি ও সাফল্য অর্জন দ্রুততর হবে।
তাই সবাইকে সময়ের সঠিক ব্যবহার ও সময় ব্যবস্থাপনার দক্ষতা অর্জন করে পেশাগত জীবনে সাফল্য অর্জন নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তি সাফল্য থেকেই ধাপে ধাপে পরিবার, সমাজ ও দেশের সাফল্য নিশ্চিত হবে। আমরা সময় বাঁচাতে পারি টিভি কম দেখে, নাটকের সিরিয়াল কম দেখে, মোবাইলের ব্যবহার কমিয়েও আড্ডায় সময় কম দিয়ে। আমাদের সমাজের তরুণ-তরুণী, গৃহিণী ও ছাত্রছাত্রীদের সময় অনেক বেশি নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি অভিভাবকদেরও ভেবে দেখতে হবে। সেকেন্ড, মিনিট, ঘণ্টা, দিবস, মাস আর বছরের সমষ্টি হচ্ছে আমাদের জীবন। এই জীবনকে আলোকিত করতে সময়ের সুষ্ঠ ব্যবস্থাপনার বিকল্প নেই। চার্লস ডিকেন্স বলেন, ‘বড় হতে হলে সর্বপ্রথম সময়ের মূল্য দিতে হবে।’
সুতরাং আমাদের প্রতিটি মুহূর্তকে হিসাব করে কাজে লাগাতে হবে। আর এ জন্য চাই একটি পরিকল্পিত রুটিন আর গোছালো জীবন। কিন্তু তা কখন থেকে? অবশ্যই এখন থেকে। কেননা প্রবাদ আছে, সময়ের এক ফোঁড় অসময়ের দশ ফোঁড় । আর জীবনে বড় কিছু করতে হলে তা শুরু করতে হবে উপযুক্ত সময়ে । কারণ, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সমাজ সংস্কারে হিলফুল ফুজুল গড়ে তুলে ছিলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সে। আইনস্টাইন ১৬ বছর বয়সেই আপেক্ষিক মতবাদ নিয়ে প্রথম চিন্তা করেন, যা পরবর্তীকালে ২৬ বছর বয়সে প্রমাণ করেন।