আদল (ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা)
ন্যায় প্রতিষ্ঠা ও অন্যায় প্রতিরোধের চেষ্টা চালানো এবং ধর্ম, বর্ণ,কৃষ্টি এবং অন্যান্য ভেদাভেদ নির্বিশেষে সকলের জন্য সুবিচার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অংশ গ্রহন করা।
وَإِذَا حَكَمْتُم بَيْنَ النَّاسِ أَن تَحْكُمُواْ بِالْعَدْلِ إِنَّ اللّهَ نِعِمَّا يَعِظُكُم بِهِ إِنَّ اللّهَ كَانَ سَمِيعًا بَصِيرًا (৫৮)
আর মানুষের পরস্পরের মধ্যে যখন কোন ব্যাপারে তোমরা ফয়সালা করবে পূর্ণ সুবিচার ও নিরপেক্ষ ইনসাফের সাথে ফয়সালা করো, আল্লাহ্ তোমাদেরকে কতই না ভাল কাজের উপদেশ দিচ্ছেন। (সূরা নিসাঃ ৫৮)
আদল প্রতিষ্ঠা আল্লাহর নির্দেশ
إِنَّ اللّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ وَالإِحْسَانِ وَإِيتَاء ذِي الْقُرْبَى وَيَنْهَى عَنِ الْفَحْشَاء وَالْمُنكَرِ وَالْبَغْيِ يَعِظُكُمْ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আল্লাহ সুবিচার, বদান্যতা ও নিকটাত্মীয়ের হক আদায় করার আদেশ দিচ্ছেন এবং বেহায়াপনা, নিষিদ্ধ কাজ ও যুলুম করা থেকে নিষেধ করেছেন। তিনি তোমাদেরকে নসীহত করছেন, যাতে তোমরা উপদেশ নিতে পারো। (সূরা নহলঃ ৯০)
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُونُواْ قَوَّامِينَ لِلّهِ شُهَدَاء بِالْقِسْطِ وَلاَ يَجْرِمَنَّكُمْ شَنَآنُ قَوْمٍ عَلَى أَلاَّ تَعْدِلُواْ اعْدِلُواْ هُوَ أَقْرَبُ لِلتَّقْوَى وَاتَّقُواْ اللّهَ إِنَّ اللّهَ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ (
হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! আল্লাহর খাতিরে সত্যের উপর কায়েম থাকো এবং ইনসাফের সাক্ষী হও। কোন দলের দুশমনী যেন তোমাদেরকে এতোটা ক্ষেপিয়ে না দেয় যে, তোমরা ইনসাফ থেকে ফিরে যাও। ইনসাফ করো। এটাই তাকওয়ার কাছাকাছি। আল্লাহকে ভয়করে চলো। নিশ্চয়ই তোমরা যা কিছু করো আল্লাহ তার পুরোপুরি খবর রাখেন( আল-মায়েদাহ ঃ ৮)
وَلاَ تَقْرَبُواْ مَالَ الْيَتِيمِ إِلاَّ بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّى يَبْلُغَ أَشُدَّهُ وَأَوْفُواْ الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ لاَ نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلاَّ وُسْعَهَا وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُواْ وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَى وَبِعَهْدِ اللّهِ أَوْفُواْ ذَلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ (১৫২)
আর তোমরা প্রাপ্ত বয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত ইয়াতীমের সম্পদেও ধারে কাছে যেয়োনা; তবে উত্তম পদ্ধতিতে যেতে পারো। ওজন ও পরিমাপে পুরোপুরি ইনসাফ করো, প্রত্যেক ব্যক্তির ওপর আমি ততটুকু দায়িত্বের বোঝা রাখি যতটুকু তার দায়িত্বের সামর্থ্যরে মধ্যে রয়েছে। যখন কথা বলো ন্যায্য কথা বলো, চাই তা তোমার আত্মীয় স্বজনের ব্যাপারেই হউক না কেন। আল্লাহর অংগীকার পূর্ণ কর। এ বিষয়গুলো আল্লাহর নির্দেশ আল্লাহ তোমাদেও দিয়েছেন। সম্ভবত তোমরা নসীহত গ্রহন করবে- (সূরা আনআম ঃ ১৫২)
ইনসাফ প্রতিষ্ঠার জন্যই আল্লাহ যুগে যুগে নবী ও রাসুল পাঠিয়েছেন
لَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلَنَا بِالْبَيِّنَاتِ وَأَنزَلْنَا مَعَهُمُ الْكِتَابَ وَالْمِيزَانَ لِيَقُومَ النَّاسُ بِالْقِسْطِ وَأَنزَلْنَا الْحَدِيدَ فِيهِ بَأْسٌ شَدِيدٌ وَمَنَافِعُ لِلنَّاسِ وَلِيَعْلَمَ اللَّهُ مَن يَنصُرُهُ وَرُسُلَهُ بِالْغَيْبِ إِنَّ اللَّهَ قَوِيٌّ عَزِيزٌ (২৫)
“আমি আমার রাসুলগণকে স্পষ্ট প্রমাণসহ পাঠিয়েছি এবং তাদের সাথে কিতাব ও মীযান নাযিল করেছি, যেন মানুষ ইনসাফের উপর কায়েম হতে পারে। আলি লোহা (বা রাষ্ট্রশক্তিও) নাযিল করেছি, যার মধ্যে বিরাট শক্তি ও মানুষের জন্য বহু কল্যাণ রয়েছে। এটা এ উদ্দেশ্যেও করা হযেছে, যাতে আল্লাহ জেনে নিতে পারেন যে, কে তাঁকে না দেখেই তাঁর ও তাঁর রাসুলগণের সাহায্য-সহযোগিতা করে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা বড়ই শক্তিমান ও প্রতাপশালী।” (হাদীদ ঃ ২৫)
মানবতার মুক্তির জন্য চেষ্টা চালানো আল্লাহর নির্দেশ
وَمَا لَكُمْ لاَ تُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالْمُسْتَضْعَفِينَ مِنَ الرِّجَالِ وَالنِّسَاء وَالْوِلْدَانِ الَّذِينَ يَقُولُونَ رَبَّنَا أَخْرِجْنَا مِنْ هَذِهِ الْقَرْيَةِ الظَّالِمِ أَهْلُهَا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ وَلِيًّا وَاجْعَل لَّنَا مِن لَّدُنكَ نَصِيرًا (৭৫)
“তোমাদের কী হলো যে, তোমরা ঐসব অসহায় পুরুষ, নারী ও শিশুদের খাতিরে লড়াই করছো না, যাদেরকে দাবিয়ে রাখা হয়েছে এবং যারা ফরিয়াদ করছে যে, হে আমাদের রব! আমাদেরকে যালিমদের এ বস্তি থেকে উদ্ধার করো। আর তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য কোন অভিভাবক ও সাহায্রকারীর ব্যবস্থা করো।” (নিসা ঃ ৭৫)
فَلْيُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ الَّذِينَ يَشْرُونَ الْحَيَاةَ الدُّنْيَا بِالآخِرَةِ وَمَن يُقَاتِلْ فِي سَبِيلِ اللّهِ فَيُقْتَلْ أَو يَغْلِبْ فَسَوْفَ نُؤْتِيهِ أَجْرًا عَظِيمًا (৭৪)
“(এসব লোকের জানা উচিত যে,) যারা আখিরাতের বিনিময়ে দুনিয়ার জীবনকে বিক্রি করে দেয়, তাদেরই আল্লাহর পথে লড়াই করা উচিত। তারপর যে আল্লাহর পথে লড়াই করবে এবং হয় নিহত হবে আর না হয় বিজয়ী হবে, তাকে আমি অবশ্যই বিরাট বদলা দান করবো।” (নিসা ঃ ৭৪)
মানবতার মুক্তির সংগ্রাম আখিরাতে নাজাতের পথ
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا هَلْ أَدُلُّكُمْ عَلَى تِجَارَةٍ تُنجِيكُم مِّنْ عَذَابٍ أَلِيمٍ (১০) تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ وَتُجَاهِدُونَ فِي سَبِيلِ اللَّهِ بِأَمْوَالِكُمْ وَأَنفُسِكُمْ ذَلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ (১১) يَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَيُدْخِلْكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ وَمَسَاكِنَ طَيِّبَةً فِي جَنَّاتِ عَدْنٍ ذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ (১২)
“হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! আমি কি তোমাদেরকে ঐ ব্যবসার কথা বলবো, যা তোমাদেরকে কষ্টদায়ক আযাব থেকে বাঁচাবে। আল্লাহ ও রাসুলের উপর ঈমান আনো এবং তোমাদের জান ও মাল দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করো। যদি তোমরা জানো তাহলে এটাই তোমাদের জন্য ভালো। আল্লাহ তোমাদের গুনাহ মাফ করে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন বেহেশতে প্রবেশ করাবেন, যার নিচে ঝর্নাধারা বইছে, আর তোমাদেরকে চিরস্থায়ী বেহেশতের খুব ভালো ঘর দেবেন। এটা অতি বড় কামিয়াবী।” (সফ ঃ ১০-১২)
বৈষয়িক কোন স্বার্থ দ্বীন প্রতিষ্ঠার পথে মুমিনের জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনা
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ لاَ تَتَّخِذُواْ آبَاءكُمْ وَإِخْوَانَكُمْ أَوْلِيَاء إَنِ اسْتَحَبُّواْ الْكُفْرَ عَلَى الإِيمَانِ وَمَن يَتَوَلَّهُم مِّنكُمْ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ (২৩) قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ (২৪)
“হে ঐসব লোক, যারা ঈমান এনেছো! তোমরা তোমাদের পিতা এবং ভাইদেরকেও তোমাদের বন্ধু বানিও না, যদি তারা ঈমানের চেয়ে কুফরীকে বেশি ভালোবাসে। তোমাদের মধ্যে যারা তাদেরকে বন্ধু বানায় তারাই যালিম। (হে রাসূল! আপনি তাদেরকে) বলুন ঃ তোমাদের পিতা, তোমাদের পুত্র, তোমাদের ভাই, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের আত্মীয়-স্বজন, তোমাদের ঐ মাল যা তোমরা কামাই করেছে, তোমাদের ঐ কারবার তোমরাযার মন্দার ভয় করো এবঙ তোমাদের ঐ বাড়ি, যা তোমরা পছন্দ করো- (এসব) যদি তোমাদের কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদের চেয়ে বেশি প্রিয় হয় তাহলে আল্লাহর ফায়সালা আসা পর্যন্ত অপেক্ষা করো। আল্লোহ ফাসিক লোকদেরকে হেদায়ত করেন না।” (তাওবা ঃ ২৩-২৪)
ذَلِكَ الْفَضْلُ مِنَ اللّهِ وَكَفَى بِاللّهِ عَلِيمًا (৭০)
“এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ দান। (আসল বিষয় জানার জন্য) আল্লাহর ইলমই যথেষ্ট।” (নিসা ঃ ৭০)
আদল সংক্রান্ত হাদীস
عَنْ عَائِشَةَ رضى قَالَ قَالَ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم “اللَّهُمَّ مَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَشَقَّ عَلَيْهِمْ فَاشْقُقْ عَلَيْهِ وَمَنْ وَلِيَ مِنْ أَمْرِ أُمَّتِي شَيْئًا فَرَفَقَ بِهِمْ فَارْفُقْ بِهِ ” . رواه مسلم
হযরত আয়েশা (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী করীম (সা) এই মর্মে দোয়া করেছিলেন, যে ব্যক্তিকে আমার উম্মতের কোন বিষয়ের কর্তৃত্ব দান করা হয়, অতঃপর সে তাদের প্রতি কঠোরতা করে, তুমি তার প্রতি কঠোর হয়। আর যে ব্যক্তি আমার উম্মতের কোন বিষয়ে কর্তৃত্ব লাভ করে তাদের প্রতি মেহেরবাণী করে, তুমিও তার উপর মেহেরবান হও। (মুসলিম)
عَن مَعْقِلَ بْنَ يَسَارٍ قَالَ سَمِعْتُ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فَقَالَ ”مَا مِنْ وَالٍ يَلِي رَعِيَّةً مِنَ الْمُسْلِمِينَ، فَيَمُوتُ وَهْوَ غَاشٌّ لَهُمْ، إِلاَّ حَرَّمَ اللَّهُ عَلَيْهِ الْجَنَّةَ ”. رواه البخارى و مسلم
হযরত মা‘কাল ইব্ন ইয়াসা (রা) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ্ (সা)-কে এ কথা বলতে শুনেছি যে, যে শাসক মুসলমানের উপর শাসন ক্ষমতা লাভ করে যালেম ও খিয়ানতকারী হিসেবে মৃত্যু বরণ করে, আল্লাহ্ অবশ্যই তার জন্য জান্নাত হারাম করবেন। (বুখারী ও মুসলিম)