Lesson 2 of 4
In Progress

সিয়াম বা রোযা

hasan.zaman জুন ১৮, ২০২৫

রমাদান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজই হল সিয়াম।

আর সিয়াম হল ফজরের উদয়লগ্ন থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়্যাতসহ পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকা।

সিয়াম পালন তথা রোযা ফরয এবং এটি ইসলামের অন্যতম একটি রুকন।

আল্লাহ তা’আলা বলেন-হে ঈমানদারগণ! তোমদের উপর রোযা ফরয করে দেয়া হয়েছেযেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরয করা হয়েছিলযাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পার – নির্দিষ্ট কয়েকদিন মাত্র ……।’’ (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৩-১৮৪)

সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবেতারা যেন এ মাসে রোযা পালন করে।’’ (সূরা আল-বাকারাহ: ১৮৫)

রোযার গুরুত্ব আরো প্রকটিত হয় সে সব ফযীলতের দ্বারাযদ্বারা একে বিশেষত্ব দান করা হয়েছে।

সে সবের মধ্যে রয়েছেঃ

১. রোযার পুরস্কার আল্লাহ স্বয়ং নিজে প্রদান করবেনঃ 

একটি হাদীসে কুদসীতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-আল্লাহ বলেন, ‘‘বনী আদমের সকল আমল তার জন্যঅবশ্য রোযার কথা আলাদাকেননা রোযা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার দিব।’’ (সহীহ বুখারীহাদীস নং ১৮০৫৫৫৮৩ ও সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২৭৬০)

২. রোযা রাখা গোনাহের কাফফারা স্বরূপ এবং ক্ষমালাভের কারণঃ

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সাওয়াবের আশায় রামাদান মাসে রোযা রাখবেতার পূর্বের সকল গোনাহ ক্ষমা করে দেয়া হবে।’’ (সহীহ বুখারীহাদীস নং ১৯১০ও সহীহ মুসলিমহাদীস নং ১৮১৭)

৩. রোযা জান্নাত লাভেরপথঃ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় ‘রাইয়ান’ – কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোযাদারগণ প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না….. রোযাদারগণ প্রবেশ করলে এ দরজা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আর কেউ সেখান দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’’ (সহীহ বুখারীহাদীস নং ১৭৯৭ ও সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২৭৬৬ )

৪. রোযাদারের জন্য রোযা শাফায়াত করবেঃ 

উত্তম সনদে ইমাম আহমাদ ও হাকেম বর্ণনা করেন যেরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-‘‘রোযা এবং কুরআন কিয়ামতের দিন বান্দার জন্য শাফায়াত করবে। রোযা বলবেহে রব! আমি তাকে দিবসে পানাহার ও কামনা চারিতার্থ করা থেকে নিবৃত্ত রেখেছি।

অতএবতার ব্যাপারে আমাকে শাফায়াত করার অনুমতি দিন…..।’’ (মুসনাদহাদীস নং ৬৬২৬আল-মুস্তাদরাকহাদীস নং ২০৩৬)

 ৫. রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মিসকের সুগন্ধির চেয়েও উত্তমঃ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘‘যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ তার শপথ! রোযাদারের মুখের গন্ধ কিয়ামতের দিন আল্লাহর কাছে মিসকের চেয়েও সুগন্ধিময়।’’ (সহীহ বুখারীহাদীস নং ১৮৯৪ ও সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২৭৬২)

 ৬. রোযা ইহ-পরকালে সুখ-শান্তি লাভের উপায়ঃ 

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-রোযাদারের জন্য দু’টো খুশীর সময় রয়েছে।

একটি হলো ইফতারের সময় এবং অন্যটি স্বীয় প্রভু আল্লাহর সাথে মিলিত হওয়ার সময়।’’ (সহীহ বুখারীহাদীস নং ১৮০৫ ও সহীহ মুসলিমহদীস নং ২৭৬৩)

 ৭. রোযা জাহান্নামের অগ্নি থেকে মুক্তিলাভের ঢালঃ রাসূল 

সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় একদিন রোযা রাখেআল্লাহ তাকে জাহান্নাম থেকে সত্তর বৎসরের দূরত্বে নিয়ে যান।’’ (সহীহ বুখারীহাদীস নং ২৬৮৫ ও সহীহ মুসলিমহাদীস নং ২৭৬৭ )

ইমাম আহমাদ বিশুদ্ধ সনদে বর্ণনা করেন – রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন-‘‘রোযা ঢাল স্বরূপ-যদ্বারা বান্দা নিজেকে আল্লাহর আযাব থেকে রক্ষা করতে পারেযেভাবে তোমাদের কেউ একজন যুদ্ধে নিজেকে রক্ষা করে।’’ (মুসনাদহাদীস নং ১৭৯০৯)

রোযার আরো ফযীলতের মধ্যে রয়েছে – এতে ইচ্ছা ও সংকল্পে দৃঢ়তা সৃষ্টি হয়চারিত্রিক মাহত্ম্য অর্জিত হয়শারীরিক ও মানসিক প্রশান্তি লাভ করা যায় এবং সর্বোপরি তা মুসলিম উম্মাহ্ একতাবদ্ধ হওয়ার এক বাস্তব নিদর্শন।